খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ ফাল্গুন, ১৪৩১ | ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা ২২তলা ডেল্টা ভবনের সামনে দুর্বৃত্তদের হামলায় আল আমিন নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন
  ১৭ বছর পর ২৭তম বিসিএসে বঞ্চিত ১১৩৭ জনের চাকরি ফেরত দিতে নির্দেশ আপিলের বিভাগের
  কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা দায়ের, আসামি অজ্ঞাত পরিচয় ৪০০/৫০০ ব্যক্তি

দীর্ঘ একদলীয় শাসন বাংলাদেশের নিরাপত্তাব্যবস্থাকেও ধ্বংস করেছে : জাতিসংঘ

গেজেট ডেস্ক

দীর্ঘ একদলীয় শাসনের ফলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমান্বয়ে রাজনীতিকীকরণ হয়েছে, যা দেশের সমগ্র নিরাপত্তা খাতকেও গ্রাস করেছে। নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ পেশাদারিত্বের পরিবর্তে রাজনৈতিক আনুগত্যকে অগ্রাধিকার দিয়েছে বলে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘একটি রাজনৈতিক দলের টানা পনেরো বছরের শাসনের ফলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রমাগত রাজনীতিকীকরণ হয়েছে, যা সমগ্র নিরাপত্তা খাতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।’

ওএইচসিএইচআর জানিয়েছে, ‘অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে পেশাদারিত্ব, সততা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নয়, বরং আওয়ামী লীগ ও এর সমর্থিত সরকারে তাদের আনুগত্য বা সংশ্লিষ্টতার ভিত্তিতে নিয়োগ ও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।’

জেনেভা থেকে গত সপ্তাহে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশের ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে আন্দোলনের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে ‘নিরাপত্তা খাতের রাজনীতিকীকরণ’ বিষয়ে একটি অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই), ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এনএসআই) এবং পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) মধ্য ও উচ্চ পর্যায়ের পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে শুধু প্রার্থীর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নয়, তাদের আত্মীয়স্বজনের রাজনৈতিক দলীয় সংযোগও যাচাই করত।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে ডেপুটি ইন্সপেক্টর-জেনারেল (ডিআইজি) বা তার ঊর্ধ্বতন পদে নিয়োগ অনুমোদন করতেন এবং আওয়ামী লীগ অনুগত ব্যক্তিদের কৌশলগতভাবে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখাসহ গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলোর নেতৃত্বে বসানো হতো।

ওএইচসিএইচআর জানিয়েছে, তাদের তথ্য অনুসন্ধানকারীদের সঙ্গে কথা বলা ব্যক্তিরা উল্লেখ করেছেন যে বাংলাদেশে পুলিশের নিয়োগ ও পদোন্নতি ব্যবস্থাপনায় স্বাধীন প্রতিষ্ঠান না থাকার কারণে রাজনৈতিক দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্তির প্রবণতা আগের সরকারগুলোর আমলেও ছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অতীতে সামরিক অভ্যুত্থান ও অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গনে ভূমিকা রেখেছে, তবে অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর তুলনায় সেনাবাহিনী তুলনামূলকভাবে কম রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত।

কিন্তু, এতে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীতে কর্মরত কর্মকর্তারা এবং ভেতরের তথ্য জানা ব্যক্তিরা ওএইচসিএইচআর’কে জানিয়েছেন, সামরিক বাহিনীও দীর্ঘদিন ধরে দলীয় রাজনীতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়েছিল, বিশেষ করে সিনিয়র পর্যায়ে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে সিনিয়র অফিসারদের পদোন্নতি দেওয়া হতো বা গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হতো। অন্যদিকে যারা অনুগত নয় বলে বিবেচিত হতো, তাদের পদোন্নতি বঞ্চিত করা হতো, দূরবর্তী পোস্টিং দেওয়া হতো বা কিছু ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হতো।

জাতিসংঘের তদন্তকারীরা পর্যবেক্ষণ করেছেন যে রাজনীতিকীকরণের ফলে ক্ষমতাসীন দল ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে একটি নেতিবাচক পারস্পরিক নির্ভরশীলতার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।

ওএইচসিএইচআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ক্ষমতাসীন দলের প্রতিদ্বন্দ্বীদের দমন করার এবং ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের অপরাধে হস্তক্ষেপ না করার বিনিময়ে পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাদের নিজেদের গুরুতর অপরাধ ও দুর্নীতির জন্য দায়মুক্তির নিশ্চয়তা পেত।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গুরুতর অপরাধের জন্য ফৌজদারি জবাবদিহিতা বিরল ঘটনা ছিল এবং সাধারণভাবে দায়মুক্তির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশি নাগরিক সমাজ সংগঠনগুলো ২৫৯৭টি কথিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং ৭০৮টি গুমের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘র‌্যাব এককভাবে ৮০০টির বেশি কথিত হত্যাকাণ্ড ও প্রায় ২২০টি গুমের ঘটনায় জড়িত ছিল। কিন্তু র‌্যাব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হত্যার দায়ে মাত্র একটি মামলায় সাজা হয়েছে, যেখানে ভুক্তভোগী ছিলেন আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী স্থানীয় নেতা।’

নাগরিক সমাজ সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ডিজিএফআই কর্মকর্তারা ১৭০টিরও বেশি কথিত গুমের ঘটনায় জড়িত ছিলেন, তবে কোনো ডিজিএফআই কর্মকর্তাকে এখন পর্যন্ত বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি।

জাতিসংঘের নির্যাতন বিরোধী কমিটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য নির্যাতন ও ঘুষ আদায়ের ব্যাপক এবং নিয়মিত চর্চা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

ওএইচসিএইচআর জানিয়েছে, বাংলাদেশ ২০১৩ সালে ‘নির্যাতন ও নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু (নিষিদ্ধকরণ) আইন’ প্রণয়ন করলেও তারপর থেকে অন্তত ১০৩ জন বন্দি নির্যাতনে নিহত হয়েছেন।

সরকার এখন পর্যন্ত এই আইনের আওতায় মাত্র ২৪টি মামলা নথিভুক্ত করেছে এবং মাত্র একটিতে পুলিশ কর্মকর্তাদের হেফাজতে নির্যাতনে হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এই দায়মুক্তির সংস্কৃতি আইন ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!